নিজস্ব প্রতিনিধি: ষাটোর্ধ্ব আফাজ উদ্দিন। পেশায় দিনমজুর। অনেকদিন থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অন্যের জমিতে বসবাস করছিলেন। অনেক সময় সামান্য বিষয় নিয়ে বসবাসরত জমির মালিকের সঙ্গে মনমালিন্য হলে, সেই জমি থেকে ভেঙে নিতে হয়েছে ঘর। এভাবেই জায়গা পরিবর্তন করে করে বসবাস করছিলেন ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর আফাজ উদ্দিন। শনিবার (১৯ জুন) দুপুরে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের হলদীগ্রাম এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে একথাগুলো জানান তিনি।
তিনি বলেন, শেষ জীবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমারে ২ শতক জমি দিছেন, পাকা ঘর বানাইয়া দিছেন। এখন আমারে ভূমিহীন বইলা তাড়াতে পারবে না কেউ। জমি পাইছি, ঘর পাইছি, শেখের বেটি (শেখ হাসিনা) আরও অনেক বছর বেঁচে থাকুক এ দোয়া করি।
শুধু আফাজ উদ্দিন নয় তার মত নিরমলা রাণী, জমিলা, সুরজ আলী, গোলাম মোস্তফাসহ এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন করে আরও ২৫ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পাচ্ছেন বিনামূল্যে দুই শতক জমি ও সেমিপাকা ঘর। আগামীকাল ২০ জুন রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর উদ্বোধন করবেন।
এ উপলক্ষে ঝিনাইগাতী উপজেলার হলদীগ্রাম এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে বইচে উৎসবের আমেজ। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে হলদীগ্রাম এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি হওয়া এসব গৃহহীনদের স্বপ্নের বাড়ি গুলো চারদিকে ইটের দেয়াল এবং মাথার উপরে লাল ও সবুজ টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। ২৫ টি সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। দুই রুম বিশিষ্ট বাড়িতে রয়েছে একটি রান্না ঘর ও টয়লেট। আছে বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা। এ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে আরও ১৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে শেরপুর জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর এই পাঁচ উপজেলার প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, বিধবা, কাজের মহিলাসহ ১৬৭টি গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন জমিসহ সেমি পাকা ঘর। বাড়ি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ১৪৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তন্মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলায় রয়েছে ২৫টি ঘর। বাকিগুলোর নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর আগে প্রথম পর্যায়ে এ জেলায় ২৯১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পেয়েছেন দুই শতক জমি ও সেমিপাকা ঘর।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২য় পর্যায়ে এ উপজেলায় ২৫ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন ঘর।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম বলেন, মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও ঘর উপহার দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, আগামীকাল রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রায়ণ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ দরিদ্র মানুষের স্বপ্ন সত্যি হবে।