বাংলা অভিধানে Bonus শ্বব্দের বেশ কয়েকটি সংজ্ঞা বা অর্থ খোঁজে পাওয়া যায় যার একটি হলো “প্রত্যাশার বাইরে আনন্দ দায়ক কোন প্রাপ্তি “। সরকারি, আধা সরকারি বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বেতন ভুক্ত কর্মকর্তা /কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন প্রকার বোনাস প্রদান করা হয়ে থাকে।
ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোন কোন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীগন এক অর্থ বছরে ৪/৫/৬টা বোনাসও পেয়ে থাকেন। আর সকল ক্ষেত্রেই একটি বোনাস বলতে বুঝায় এক মাসের মুল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ।
অবাক, হতবাক ও নিরাশ, হ্রদয় বিদারক, অসম্ভব এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো বেসরকারি এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বছরে কেবলমাত্র ২টি ঈদ বোনাস পাচ্ছেন মুলবেতনের এক চতুর্থাংশ বা শতকরা পঁচিশ ভাগ হিসেবে।
২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন মূলেএমপিও শিক্ষকদের জন্য মূল বেতনের সিকি ভাগ হিসেবে ২টি ঈদ বোনাস সুবিধা চালু করেন,তৎকালে যারা এই প্রজ্ঞাপনটি জারী করছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই এ জন্যে যে, এমপিও শিক্ষকদের তারা ঈদ বোনাসের আওতায় এনেছেন কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক ভাবে তাদের বিবেকের কাছে এ প্রশ্ন করতেও ইচ্ছে হয় যে,তারা কোথায় পেয়েছিলেন সিকিভাগ বোনাস প্রদানের মত সর্বনাশা ধারণাটি।
যার কারনে যুগ যুগ ধরে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এমপিও শিক্ষকরা। ২৫% ঈদবোনাস পাওয়ার চেয়ে মোটেই না পাওয়া অনেক ভাল ছিল কারণ এত দিনে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও আর্থিক সুবিধাদির অনেক পরিবর্তন বা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে হয়তোবা শতভাগ ঈদ বোনাস প্রাপ্তির বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই সমাধান হয়ে যেত। অথচ দীর্ঘ দিনেও কলংকিত ২৫% থেকে উত্তোলনের কোন পথ পাওয়া যাচ্ছে না।
উৎসব ভাতার অর্থই হলো এক মাসের মুল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ একথা কে না জানে।প্রজ্ঞাপনে শুধু মাত্র এমপিও শিক্ষকদের উৎসব বোনাস সুবিধা প্রদানের কথাটি উল্লেখ থাকলেই তারা শতভাগ বোনাস পেতেন কিন্তু পঁচিশ ভাগ শব্দ টি উল্লেখ করায় প্রজ্ঞাপনটিকে আমরা কলংক জনক আদেশ বলে মনে করছি, যার দরুন এমপিও শিক্ষকদের গলায় ফাঁস ও সর্বনাশ ।
বিগত প্রায় ১৭ বছর যাবত এমপিও শিক্ষকরা ২৫% উৎসব বোনাসের ভার মাথায় নিয়ে নাক,মুখ ও চোখ বন্ধ করে বছরে ২ বার ঈদ পালন করছেন,কারণ প্রতি ঈদেই এমপিও শিক্ষকদের ঈদ বোনাসের চেক হস্তান্তরের খবর প্রচারিত হয় কিন্তু শিক্ষকরা যে সিকি ভাগ ঈদ বোনাস পান এতে যে অনেক শিক্ষকের এক সেট ভালো কাপড় কেনার টাকাও হয়না এ খবর তো কেও জানেনা এমনকি শিক্ষকদের স্ত্রী, সন্তান বা পিতা – মাতাও বিষয়টি বুঝেন না, ফলে প্রত্যাশার বাইরে প্রাপ্তির স্থলে এমপিও শিক্ষকদের প্রত্যাশিত শতভাগ ঈদ বোনাসই ভাগ্যে জুটছেনা উপরন্তু সিকি ভাগ ঈদ বোনাস পারিবারিক জীবনে দুর্বিষহ বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের বহুদা বিভক্ত নাম সর্বস্ব বা তথাকথিত সংঠন সমুহ এই যৌক্তিক দাবীটি নিয়ে মাথা গামানোর খুব বেশী প্রয়োজন বোধ করেন নাই বা এযাবৎ দাবীর পক্ষে সরকারের সমর্থন আদায় করতেও সক্ষম হন নাই।
আশার বিষয় গত কিছু দিন যাবৎ ” বাংলাদেশ এমপিও ভুক্ত শিক্ষক অনলাইন পরিষদ” শতভাগ উৎসব বোনাস প্রদানের দাবীতে বর্তমানে প্রদত্ত ২৫% বোনাসের টাকা সরকারের তহবিলে ফেরত প্রদান, ঈদের দিনে মানব বন্ধন,আলোচনা সভা ও স্মারক লিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দাবীর প্রতি ইতিবাচক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন যার দরুন মহান জাতীয় সংসদেও দাবীটি উৎথাপিত হয়েছে।
জাতীয় বেতন স্কেল নীতিমালা, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও নিতিমালা এবং গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংবিধানের মৌলিক অধিকার মোতাবেক এমপিও শিক্ষকগন শতভাগ ঈদ বোনাস প্রাপ্য।
বিষয়টি নিয়ে এখনই শিক্ষকদের অবিভাবক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়ীত্বশীল মহলের বিবেচনা প্রসুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সকলের কামনা।