জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ‘আয়রন লেডি’

জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ‘আয়রন লেডি’
Views: 26 Like (0) Dislike (0) Shares (1)

জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ‘আয়রন লেডি’ জাপানের রক্ষণশীল রাজনীতিক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি সানায়ে তাকাইচি দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। ৬৪ বছর বয়সী এই নেত্রী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা জোরদারে ব্যাপক সরকারি ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছেন—যা ব্যাংক অব জাপানের সুদবৃদ্ধি নীতির বিপরীতে অবস্থান তৈরি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার পদত্যাগের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। দীর্ঘ ২৬ বছরের এলডিপি-কমেইতো জোট ভেঙে যাওয়ার পর এলডিপি এখন জাপান ইনোভেশন পার্টির সঙ্গে নতুন জোট গঠন করেছে। মঙ্গলবার সংসদীয় অধিবেশনে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।

১৯৬১ সালে নারা প্রিফেকচারে জন্ম নেওয়া তাকাইচির শৈশব ছিল এক সাধারণ পরিবারে। বাবা টয়োটার সহযোগী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, মা ছিলেন পুলিশ সদস্য। কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশোনা শেষে ১৯৮৭ সালে তিনি মার্কিন কংগ্রেসের এক নারী সদস্যের দপ্তরে কাজ করেন। পরে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং পানাসনিকের প্রতিষ্ঠাতা কোনোসুকে মাতসুশিতার কাছ থেকে রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা পান।

১৯৯৩ সালে প্রথমবার স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাকাইচি, পরে যোগ দেন এলডিপিতে। ৩০ বছরেরও বেশি রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১০ বার নির্বাচিত হয়েছেন। তাকাইচি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে শিনজো আবে-র ‘আবেনমিক্স’ নীতির অনুসারী। তাঁর সমর্থকেরা নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে বলছেন ‘সানায়েনমিক্স’। এতে তিনি সুদের হার কম রাখা ও বিপুল সরকারি ব্যয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন—অর্থাৎ প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়ে পরে আর্থিক শৃঙ্খলা বিবেচনা করা হবে।

তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে অবকাঠামো, সেমিকন্ডাক্টর, সবুজ প্রযুক্তি ও মহাকাশ খাতে বিনিয়োগ—যা জাপানের প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা বাড়াতে পারে। তাকাইচির যুক্তি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে বাড়তি রাজস্বই দেশের বিশাল ঋণভার সামলাতে সাহায্য করবে। তিনি প্রতিরক্ষা খাতেও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। উত্তর কোরিয়া ও চীনের হুমকির প্রেক্ষিতে তিনি জিডিপির ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে। পাশাপাশি সংবিধানের ৯ নম্বর ধারা সংশোধন করে জাপানের সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করার পরিকল্পনাও জানিয়েছেন।

তবে তাঁর অতীত রাজনৈতিক অবস্থান ও জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি কিছু ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে ইয়াসুকুনি যুদ্ধস্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শনের বিষয়ে তাঁর অবস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে, যা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল করতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, তাকাইচি যদি অর্থনৈতিক জনমুখী নীতি ও কঠোর জাতীয়তাবাদী অবস্থান ধরে রাখেন, তবে তা জাপানের রাজনৈতিক ধারায় বড় পরিবর্তন আনবে।

জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ‘আয়রন লেডি’ আগামী মঙ্গলবার তাকাইচি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি হবেন এলডিপির ৭০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরে। তিনি নির্বাচিত হলে প্রথম বড় কূটনৈতিক পরীক্ষার মুখে পড়বেন অক্টোবরের ২৭ থেকে ২৯ তারিখে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপান সফরে আসবেন। ততদিন পর্যন্ত জাপানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে অনিশ্চয়তার মধ্যে।