বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও ভুক্ত শিক্ষক তথা এমপিও শিক্ষকদের ২৫% ঈদ বোনাস ও প্রাসঙ্গিক কিছু কিছু বিষয়ে যৌক্তিক আলোচনা নিয়ে আজ লিখছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহজে অনুধাবনের প্রত্যাশায় সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে আমার বক্তব্য, মতামত ও আলোচনা ৫টি পৃথক অনুচ্ছেদে উপস্থাপন করলাম।
প্রসঙ্গ এক:
বাংলা অভিধানে Bonus শ্বব্দের বেশ কয়েকটি সংজ্ঞা বা অর্থ খোঁজে পাওয়া যায় যার একটি হলো “প্রত্যাশার বাইরে আনন্দ দায়ক কোন প্রাপ্তি”।অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এমপিও শিক্ষরা গত ১৭ বছর যাবৎ মাসিক মূল বেতনের পচিশ শতাংশ হিসেবে দু’টি ঈদ বোনাস পেয়ে আসছেন।১৬ নম্বর থেকে ২২নম্বর পে কোড পর্যন্ত শিক্ষকরা টাকার হিসেবে ঈদ বোনাস পান ২৩২৫/- টাকা থেকে ৫৫০০/- টাকা পর্যন্ত। বর্তমান বার্ষিক প্রবৃদ্ধির কারণে এর সামান্য কিছু বাড়তি হতে পারে । বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান প্রধান , সহ প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক গন ব্যাতিত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার সকল শিক্ষক বেতন ভাতা পান ১৬-২২ নম্বর পে কোডে। অর্থাৎ মোট জন শক্তির প্রায় ৯০% এ সীমা রখায় আবদ্ধ।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন শীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত একটি দেশের নাম। নাগরিক জীবনের সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করেই হয়তোবা দেশের মান নির্নয় করার কথা, যেখানে একজন শিক্ষক ২৩২৫-৫৫০০ টাকা ঈদ বোনাস পেয়ে থাকেন সেখানে জীবন যাত্রার মান কিরুপ হতে পারে তা বিবেকবানরাই বিবেচনা করবেন।
প্রসঙ্গ দুই:
প্রথম পর্বে প্রত্যাশার বাইরে আনন্দ দায়ক কোন প্রাপ্তি কে বোনাস বলছি কিন্তু চাকরি জীবিদের ক্ষেত্রে বোনাস এর অর্থ হলো ঈদ, পুজা বা বড় দিন উপলক্ষে এক মাসের মুল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রাপ্তি। এছাড়াও সরকারি, আধা সরকারি বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বেতন ভুক্ত কর্মকর্তা /কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন প্রকার বোনাস প্রদান করা হয়ে থাকে।
বিভিন্ন ব্যংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোন কোন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীগন এক অর্থ বছরে ৪/৫/৬টা বোনাসও পেয়ে থাকেন। আর সকল ক্ষেত্রেই একটি বোনাস বলতে বুঝায় এক মাসের মুল বেতনের সমপরিমাণ অর্থকে।অবাক, হতবাক ও নিরাশ হওয়ার বিষয় হলো বেসরকারি এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বছরে কেবলমাত্র ২টি ঈদ বোনাস পাচ্ছেন মুলবেতনের এক চতুর্থাংশ বা শতকরা পঁচিশ ভাগ হিসেবে। ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন মূলেএমপিও শিক্ষকদের জন্য মূল বেতনের এই সিকি ভাগ বোনাস সুবিধা চালু করেন। আমরা মনে করি তৎকালীন দায়িত্ব শীল ব্যাক্তিরা জ্ঞাত সারেই শিক্ষকদের প্রতি এই বৈষম্য মুলক ও বিমাতা সুলভ আচরনের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। এমপিও শিক্ষক সম্প্রদায়কে কথিত বৈষম্য থেকে মুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ইচ্ছাই যথেষ্ট।
প্রসঙ্গ তিন:
বিষয়টি নিয়ে এমন সময়ে আলোচনা করছি, যখন সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা আরেক ধাপ বাড়ানোর বিষয়ে নথি চালা-চালি চলছে,যে কোন সময় এ বিষয়ে পজেটিভ সিদ্ধান্ত এসে যেতে পারে।বে সরকারী শিক্ষকদের ২৫% ইদ বোনাস প্রদানের অমানবিক রেওয়াজটি একই সাথে বিবেচনায় রাখতে সদাসয় সরকারের দায়িত্ব শীল ব্যাক্তিদের কৃপা দৃষ্টি কাম্য, কেননা ২৫% ইদ বোনাস এমপিও শিক্ষকদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে দুর্বিষহ বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ২৫% ঈদবোনাস পাওয়ার চেয়ে মোটেই না পাওয়া অতি উত্তম, কারন বোনাসের টাকা দিয়ে স্ত্রীর জন্য ভালো একটি শাড়ী বা সন্তানের জন্য ভালো এক সেট পোশাক কেনা যায়না আর কোরবানির তো নামই উচ্চারণ করার সুযোগ নেই।
বিগত এই ১৭ বছর যাবত এমপিও শিক্ষকরা ২৫% উৎসব বোনাসের ভার মাথায় নিয়ে নাক,মুখ ও চোখ বন্ধ করে বছরে ২ বার ঈদ পালন করছেন, প্রতি ঈদেই এমপিও শিক্ষকদের ঈদ বোনাসের চেক হস্তান্তরের খবর পত্র/পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচারিত হয় কিন্তু শিক্ষকরা যে সিকি ভাগ ঈদ বোনাস পান এখবরতো ছেলে সন্তান বা আত্মীয় স্বজনরা জানেনা বা জানলেও বিশ্বাস করে না, যার দরুন সুদের ঋন করে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে হয় এবং এই সুদের গ্লানি সারা বছর টানতে হয়। শুধু তাই নয় ২৫% ঈদ বোনাস আনন্দ দায়ক প্রাপ্তির স্থলে দুঃখ ও বিষাদে পরিনত হয়ে,চোখের জল ঝরাচ্ছে” ঝর্ণা ম্যাডামের ” মত পাঁচ লক্ষাধিক এমপিও শিক্ষকের।
প্রসঙ্গ চার:
বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের নাম সর্বস্ব ও রাজনৈতিক দল এবং সরকারের লেজুড় ভিত্তিক তথাকথিত সংগঠনের নেতৃত্ব গত ১৭ বছরে শতভাগ ঈদ বোনাসের যৌক্তিক দাবীটি নিয়ে মাথা গামানোর খুব বেশী প্রয়োজন বোধ করেন নাই বা এ বিষয়ে সরকারের সমর্থন আদায় করতে পারেন নাই।
আশার বিষয় গত কিছু দিন যাবৎ ” বাংলাদেশ এমপিও ভুক্ত শিক্ষক অনলাইন পরিষদ” সহ বেশ কয়েকটি সাধারণ সংগঠন শতভাগ উৎসব বোনাসের দাবীতে বর্তমানে প্রদত্ত ২৫% বোনাসের টাকা সরকারের তহবিলে ফেরত প্রদান, ঈদের দিনে মানব বন্ধন,আলোচনা সভা ও স্মারক লিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দাবীর প্রতি ইতিবাচক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন যার দরুন মহান জাতীয় সংসদেও দাবীটি উৎথাপিত হয়েছে।
জাতীয় বেতন স্কেল নীতিমালা, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও নিতিমালা এবং গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংবিধানের মৌলিক অধিকার মোতাবেক এমপিও শিক্ষকদের শতভাগ ঈদ বোনাস তো দিতেই হবে একই সাথে সরকারি বিধি এবং জাতীয় বেতন স্কেলের শর্তালোকে বাড়ী ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদানের বিষয়টি ও মানবিক ভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গ পাঁচ:
শতভাগ ঈদ বোনাস, পুর্নাঙ্গ বাড়ী ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা প্রদান করে বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করলেই তাদের চাকরি জাতীয় করন হয়ে যাবে বিষয় টি এমন নয় বরং জাতীয় করন একটি সুদূর প্রসারি এবং অত্যন্ত সু কঠিন। সরকারি চাকুরেদের সুযোগ সুবিধার অন্ত নেই কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের মাসিক বেতন ভাতা ব্যতিত আর কোন আর্থিক সুবিধা নেই ফলে সম্মান জনক জীবন যাত্রার কথা বিবেচনা করলে বে সরকারী শিক্ষক দের শতভাগ ঈদ বোনাস, পুর্নাঙ্গ বাড়ীভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান ছাড়াও মাসিক বেতনের কমপক্ষে ৩০% মহার্ঘভাতা প্রদান এখন সময়ের দাবী।