নতুন একটি দেশে হামলার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প

নতুন একটি দেশে হামলার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প
Views: 6 Like (0) Dislike (0) Shares (1)

নতুন একটি দেশে হামলার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে থাকা কোকেন তৈরির কারখানা এবং মাদক পাচারের রুটগুলোতে হামলার পরিকল্পনা বিবেচনা করে দেখছেন। তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে তিনি এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) পরিস্থিতির বাহ্যিক লক্ষণ বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইউরোপে মোতায়েন নৌবাহিনীর সবচেয়ে আধুনিক বিমানবাহী রণতরি স্ট্রাইক গ্রুপটিকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে ওই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্প সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্কিন প্রশাসন সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দিলেও সে দেশ থেকে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প কূটনৈতিক পথ পুরোপুরি বন্ধ করেননি।

ভেনেজুয়েলা কোকেনের অন্যতম উৎপত্তিস্থল নয়। তবু ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরোকে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে মাদক কারখানাকে নিশানা করে সামরিক অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে কিছু পরিকল্পনা প্রেসিডেন্টের বিবেচনায় রয়েছে। তবে তিনি কূটনৈতিক আলোচনাকে বাতিল করে দেননি

আলোচনায় সরাসরি যুক্ত দ্বিতীয় এক কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে অনেক প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। তৃতীয় এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা চলছে। তবে সর্বোচ্চ স্তরে আপাতত ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে মাদকের আস্তানায় আঘাত হানার দিকেই মনোযোগ বেশি। বেশ কিছুদিন ধরে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে স্থলভাগে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে কঠোর কঠোর বক্তব্য দিচ্ছেন।

নতুন একটি দেশে হামলার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প মার্কিন সামরিক বাহিনীও আন্তর্জাতিক জলসীমায় সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকাগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হেগসেথের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত রাতে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক পাচারকারী একটি নৌকায় হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। গত মাসে মার্কিন অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১০টি নৌযানে হামলা চালানো হয়েছে, এতে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন।

সিএনএন আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, মাদুরোকে দুর্বল করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরেও হামলা চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করছেন। ট্রাম্প নিজে প্রকাশ্যে স্থলভাগে সামরিক অভিযান নিয়ে কথা বলেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেননি, এর পরিণতি কী হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, মাদকের ‘রুটগুলোতে’ হয়তো হামলা চালানো হতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ভেনেজুয়েলায় শাসন পরিবর্তনের চাপ দিচ্ছেন।

তাঁরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযান মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সহায়ক হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র সিএনএনকে জানায়, মাদক পাচারের অবৈধ আয় থেকে যাঁরা লাভবান হচ্ছেন, তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যেতে পারে, যাতে তাঁরা নিজেরাই মাদুরোকে উৎখাতের কথা বিবেচনা করেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিওতে মাদুরোকে সবাইকে শান্ত থাকতে ইংরেজি ভাষায় আহ্বান জানাতে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তরের (ইউএনওডিসি) তথ্য অনুসারে, ভেনেজুয়েলা কোকেন উৎপাদনকারী দেশ নয়। কোকেনের প্রধান উপাদান ‘কোকা’ গাছের বেশির ভাগ চাষ হয় কলম্বিয়া, পেরু ও বলিভিয়ায়। গত মার্চে প্রকাশিত ইউএস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ডিইএ) বার্ষিক প্রতিবেদনে কোকেন পাচারকারী দেশের তালিকায় ভেনেজুয়েলার নাম ছিল না। বরং ইকুয়েডর, মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর কথা বলা হয়েছে।

তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনো বলছেন, ভেনেজুয়েলার মধ্য দিয়ে কিছু মাদক পাচার হয়। তাঁরা মনে করিয়ে দেন, ২০২০ সালে ফেডারেল আদালত মাদুরোকে নারকো-সন্ত্রাস এবং কোকেন আমদানির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।
রুবিও গত সেপ্টেম্বরে ইকুয়েডর সফরে গিয়ে বলেছিলেন, নিকোলা মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের চোখে একজন মাদক পাচারকারী এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার থেকে পলাতক ব্যক্তি।

এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘তাড়াহুড়ো করছে না’। কারণ, প্রেসিডেন্ট বর্তমানে এশিয়া সফর এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। কর্মকর্তারা বলেন, ট্রাম্প কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখলেও চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি মাদুরো এবং ভেনেজুয়েলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ বন্ধ করে দেন। প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেলের নেতৃত্বে ওই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছিল।

মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরের কোনো নিশানায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে হলে সম্ভবত কংগ্রেসের অনুমোদন বা অন্ততপক্ষে কংগ্রেসকে জানাতে হবে। গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প সিএনএনকে বলেন, কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা না করলেও তিনি বিদেশে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, স্থলভাগে কোনো অভিযান চালানো হলে তিনি কংগ্রেসকে জানাবেন। তবে তিনি মনে করেন না, কংগ্রেসে এ জন্য কোনো বিরোধিতা হবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি হয়তো যুদ্ধের ঘোষণা চাইব না। আমি মনে করি, আমরা কেবল সেই লোকদের হত্যা করব, যাঁরা আমাদের দেশে মাদক নিয়ে আসছেন। আমরা তাঁদের হত্যা করব।’ ওই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনী জড়ো করায় সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পেন্টাগনের প্রেস সচিব শন পার্নেল এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড স্ট্রাইক গ্রুপ এবং এর যুদ্ধবিমান ইউনিটের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো—‘আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনগুলোকে ভেঙে দেওয়া এবং মাদক সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা।