
বুনো আঙুর গ্রামবাংলার অচেনা কিন্তু উপকারী লতা
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা, বনপথের ধারে কিংবা ফসলের জমির চারপাশে বেড়া ঘেঁষে যে সব লতা দেখা যায়, তার মধ্যে একটি হলো বুনো আঙুর, স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ একে “জংলি আঙুর”, “লতা আঙুর” বা “তিনপাতা লতা” নামেও চেনে। বৈজ্ঞানিক নাম Cayratia trifolia, এটি আঙুর পরিবারেরই (Vitaceae) সদস্য।
গাছের বৈশিষ্ট্য:
এই গাছটি মূলত একটি লতানো গুল্মজাত উদ্ভিদ, যা অন্য গাছ বা কাঠামোর সঙ্গে জড়িয়ে বাড়ে।
পাতাগুলো সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত (তাই “trifolia” নামটি এসেছে)
কান্ড নরম ও হালকা সবুজ
ফলগুলো ছোট, গোলাকার, প্রথমে সবুজ, পরে কালচে বেগুনি হয়
প্রতি থোকায় অনেকগুলো ছোট ফল একসঙ্গে ঝুলে থাকে, অনেকটা আঙুরের মতো
বিস্তৃতি ও কোথায় পাওয়া যায়:
এটি স্বাভাবিকভাবে জন্মে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়:
সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, পার্বত্য এলাকা ও নদীপাড়ের ঝোপঝাড়ে
ফসলের জমির পাশে বা পরিত্যক্ত স্থানে, যেখানে সূর্যালোক ও আর্দ্রতা দুটোই থাকে
উপকারিতা ও ব্যবহার:
বুনো আঙুর শুধু বনে থাকা এক লতা নয়, এর আছে নানা গুণাগুণ।
লোকজ চিকিৎসায়:
পাতার রস ক্ষত বা ঘায়ের জায়গায় লাগালে দ্রুত শুকায়
ফলের রস জ্বর ও দেহের তাপ কমাতে ব্যবহৃত হয়
কিছু অঞ্চলে পাতা ও ফল কষা হিসেবে দাঁতের ব্যথা বা মুখের ঘা কমাতে ব্যবহার করা হয়
খাদ্য ও পুষ্টিগুণ:
কাঁচা ফল হালকা টক-মিষ্টি স্বাদের
এতে আছে ভিটামিন সি, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলস
হালকা কষা স্বাদ হজমে সাহায্য করে
আয়ুর্বেদিক ব্যবহারে:
রক্ত পরিশোধনে সহায়ক
স্নায়ুর দুর্বলতা ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ব্যবহৃত হয়
সতর্কতা:
অপরিপক্ব ফল বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমে সমস্যা ও বমি হতে পারে
গাছের কিছু অংশে সামান্য অ্যালকালয়েড পদার্থ থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা ঠিক নয়
প্রাকৃতিক ভূমিকা: বুনো আঙুর গ্রামবাংলার অচেনা কিন্তু উপকারী লতা বুনো আঙুর বন্যপ্রাণীর খাদ্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষ করে পাখি, বানর ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এই ফল খায়। গাছের ঘন পাতার লতা অনেক সময় ছোট প্রাণীর আশ্রয়ও হয়।






